নবম পে স্কেল সরকারী চাকরিজীবীদের জন্য অতিব জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জীবনযাপন কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের দাবি ৯ম পে কমিশন গঠন করে ৯ম পে স্কেল প্রদান করা হোক। জিনিসপত্র এর দাম সবই ঊর্ধ্বগামী, দাম কমানোও সময়সাপেক্ষ, এই প্রেক্ষিতে পে স্কেল বা চলতি সময়ে জিনিসপত্রের দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মহার্ঘ ছাড়া সরকারী কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছে! এমনটাই দাবি সরকারী চাকরিজীবীদের।
নবম জাতীয় পে স্কেল
১৯৭৩ সালে এ দেশে ১ম পে স্কেল গঠিত হয়। এরপর সর্বশেষ ২০১৫ সালে অষ্টম বেতন স্কেল প্রকাশ করা হয়েছিল। সাধারণত বিগত পে স্কেল গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতি ৫ বছর পর পর সরকার কর্তৃক নতুন বেতন স্কেল গঠিত হয়েছিল। কিন্তু নবম পে স্কেল প্রায় আট বছর দীর্ঘায়িত হওয়ার পরেও দেশের অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ের কারণে এখনও পর্যন্ত নবম পে স্কেল গঠন করা সম্ভবপর হয়নি।
নবম পে স্কেল ২০২৪
২০২০ সাল থেকে বর্তমান অবধি সারাবিশ্বেই খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের মন্দা চলছে। মহামারী করোনা ভাইরাস সহ রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের পরিণতিতে বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটা বিপর্যস্ত। এর প্রভাবও বাংলাদেশের উপর অনেকটাই পড়েছে। সকল পণ্যের দাম রাতারাতি হুড়মুড়িয়ে বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছে না কেবল সরকারি চাকরিজীবী সহ সকল স্তরের চাকরিজীবীদের বেতন। এ নিয়ে সরকারি চাকরিজিবিদের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তারা নবম পে স্কেলের জোরদার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি পণ্যের দাম ৫০-৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও বাড়ছে না চাকরিজীবীদের বেতন।
প্রস্তাবিত পে স্কেল-২০২৪
৯ম পে- স্কেল সম্পর্কে এক কর্মকর্তা বলেন অর্থ বিভাগ এর বাস্তবায়ন শাখা এখন নবম পে স্কেল বাস্তবায়ন এর জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। ৯ম পে -স্কেল সম্পর্কে তিনি আরো বলেন সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে চলতি অর্থবছরের শেষের দিকে, জাতীয় নির্বাচন এর ঠিক আগে সরকার নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করতে পারে।
নবম পে স্কেলের দাবিসমূহ
ঐক্য পরিষদের দাবিগুলো হলো—১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখা; সচিবালয়ের মতো সকল দফতর, অধিদফতরের পদ-পদবি পরিবর্তনসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন; টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনরায় বহাল করতে হবে; বিদ্যমান গ্র্যাচুইটির হার ৯০ শতাংশের স্থানে ১০০ ভাগ নির্ধারণ করা ও পেনশন গ্র্যাচুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে; সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন নিয়োগ বিধি-২০১৯ এর ভিত্তিতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ; আউট সোর্সিং পদ্ধতি বাতিল করে উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা; ব্লক পোস্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সকল পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করা এবং বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয় করে সকল ভাতা পুনঃ নির্ধারণ করা এবং চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স সীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করা।
পে স্কেল ২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে বলেন, আমাদের মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। যেহেতু ইনফ্লেশন বেড়ে গেছে, তাই ক্রয় ক্ষমতা অনুযায়ী এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন বাড়ানো যেতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সালে আমরা যখন বেতন ভাতা বৃদ্ধি করি, আমরা একটা গবেষণায় দেখেছিলাম যে ইনফ্লেশনের (মুদ্রাস্ফীতি) সাথে সাথে একটা পারসেন্ট হারে বেতন বাড়বে। প্রতি বছরের হিসাব মতে ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াই। অনেক সুযোগও দিয়েছি, বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে, ফ্ল্যাট কেনার ভাতা, গাড়ি কেনার লোন ইত্যাদি।
তিনি বলেন, যেহেতু ইনফ্লেশন কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সেই জায়গায় আবার কতটুকু পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া যায় সেই চিন্তা-ভাবনা করছি। প্রতি বছরের হিসাব মতো ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াব। তাছাড়া অনেক সুযোগও দিয়েছি। বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে ফ্ল্যাট কেনার লোন, গাড়ি কেনার লোনসহ অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই করোনার সময়, ইউক্রেন যুদ্ধের সময় বাজেট যে করতে পারছি এজন্য ধন্যবাদ জানাবেন। বাজেটের প্রস্তুতি ঠিকঠাক করে দিয়েছি। কোনো অনাথ এসে কী বলছে সেই দায়িত্ব তো আমরা নেব না। আইএমএফ লোন তাদেরকেই দেয় যাদের লোন পরিশোধ করার সক্ষমতা থাকে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এতো অনাথ হয়নি। দেওয়ার মতো সামর্থ্য আছে বলেই আমরা নিয়েছি, এটা বাস্তব কথা।