শিক্ষা আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি আমাদের দক্ষতা এবং জ্ঞান বিকাশ করতে সাহায্য করে যাতে আমরা আমাদের ক্যারিয়ার এবং জীবনে সফল হতে পারি। এটি আমাদের চারপাশের জগতকে বুঝতে এবং জ্ঞাত সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করে।
শিক্ষা হল সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র যা আপনি বিশ্বকে পরিবর্তন করতে ব্যবহার করতে পারেন।
নেলসন ম্যান্ডেলা
শিক্ষা ব্যবস্থা
বিশ্বের অধিকাংশ মানুষেরই শিক্ষার কোনো না কোনো রূপ আছে, তা আনুষ্ঠানিক হোক বা অনানুষ্ঠানিক। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সাধারণত স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে সঞ্চালিত হয় এবং প্রায়ই সরকারী সংস্থাগুলি দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হয়। এটি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে এবং ডিগ্রি বা ডিপ্লোমার মতো যোগ্যতার দিকে নিয়ে যায়।
অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, অন্যদিকে, সাধারণত কাঠামোগত বা নিয়ন্ত্রিত হয় না। এতে বাবা-মা বা বড়দের কাছ থেকে শেখা, জীবনের অভিজ্ঞতা বা অন্যদের থেকে নতুন দক্ষতা বাছাই করার মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় শিক্ষাই আমাদের জ্ঞান এবং দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা নতুন সুযোগ এবং অভিজ্ঞতার দিকে নিয়ে যেতে পারে যা আমরা অন্যথায় পেতাম না।
আমাদের শিক্ষা জীবনে কেন গুরুত্বপূর্ণ?
শিক্ষা আমাদের জীবনে এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। শিক্ষা আমাদের সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে। এটি আমাদের চারপাশের বিশ্ব সম্পর্কে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করে। তদুপরি, শিক্ষা আমাদের ক্যারিয়ার গড়তে এবং একটি ভাল জীবিকা অর্জন করতে সহায়তা করে। পরিশেষে, শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আমাদের উন্নত নাগরিক হতে এবং আমাদের সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে সাহায্য করে।
১. জ্ঞান অর্জনের জন্য
শিক্ষা আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি আমাদের জ্ঞান অর্জন, দক্ষতা এবং জ্ঞান বিকাশ করতে সাহায্য করে যাতে আমরা আমাদের নির্বাচিত ক্যারিয়ারে সফল হতে পারি।
এটি আমাদের জীবনকে দেখার দৃষ্টিকোণে বিকাশ ও বিকাশ করে। এটি আমাদের জীবনে আমাদের চারপাশে মতামত তৈরি করতে এবং দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সহায়তা করে।
এর অর্থ কেবল আমাদের কাছে কোনও বইয়ের জ্ঞান দেওয়া নয়, এটি বিভিন্ন ধরণের দক্ষতা যেমন অঙ্কন, গাওয়া, চিত্রকর্ম, নৈতিকতা ইত্যাদিতে বিভিন্ন ধরণের জ্ঞান সরবরাহ করে
২. মানব সম্পদ
সুশিক্ষা হলো স্বাধীন মানুষ তৈরির এক যোগ্য হাতিয়ার। শিক্ষা কোনো পণ্য নয়। শিক্ষা মূলত: সামাজিক সেবা। উপযুক্ত শিক্ষাই সত্যিকার মানুষ হওয়ার উপায়। মানুষকে সম্পদে পরিণত করতে হলে মানুষের কর্মক্ষমতার উৎকর্ষ সাধন করা একান্তভাবে দরকার। আর এই উৎকর্ষতা বাড়ে তার কর্মদক্ষতার উন্নয়নের মাধ্যমে। এর মাঝে আবার সুশিক্ষা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যার মাধ্যমে মানুষ অর্থনৈতিক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধন করতে পারে। আর এভাবেই সব ধরনের বাধা পেরিয়ে উত্তরোত্তর একটি জাতি উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে পারে।
৩. চাকরির প্রস্তুতিতে এগিয়ে থাকা
ভাল শিক্ষা না থাকলে, চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করার সময় আমরা একটি অসুবিধায় পড়ব। নিয়োগকর্তারা আমাদের নিয়োগ করার সম্ভাবনা কম হবে এবং আমরা আমাদের ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগগুলি মিস করব। শিক্ষা আমাদের জীবন সম্পর্কে জ্ঞাত সিদ্ধান্ত নিতে এবং সমাজে ইতিবাচক উপায়ে অবদান রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলিও দেয়।
৪. সুখি জীবন প্রদান
একটি ভাল শিক্ষা আমাদের সুখী এবং পরিপূর্ণ জীবন যাপন করতে সাহায্য করতে পারে। এটি আমাদের দক্ষতা এবং জ্ঞান সরবরাহ করতে পারে যা আমাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছানোর জন্য আমাদের প্রয়োজন। তাই এটা অপরিহার্য যে আমরা আমাদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করি, এবং নিশ্চিত করি যে আমরা যতটা সম্ভব সেরা শিক্ষা গ্রহণ করি।
৫. সমাজ উন্নয়নে অবদান
শিক্ষা আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি আমাদের দক্ষতা এবং জ্ঞান বিকাশ করতে সাহায্য করে যাতে আমরা আমাদের কর্মজীবনে সফল হতে পারি। এটি আমাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে আমাদের আরও ভাল নাগরিক হতে সাহায্য করে। শিক্ষা আমাদের জীবন সম্পর্কে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে এবং আমাদের সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম করে।
৬. ভাষা শেখায় অবদান
শিক্ষা মাতৃভাষা ব্যতীত অন্য বিভিন্ন ভাষা শেখার সুযোগ দেয় তাই সমগ্র বিশ্বের কোথাও বেঁচে থাকার দক্ষতা সরবরাহ করে। বাড়িতে বসে কেউ নতুন কিছু শিখেন না, শিক্ষা তাদের নতুন জ্ঞান অর্জনের জন্য সরবরাহ করে।
পাঠ্যপুস্তকের বাইরে আমরা যা যা শিখি?
প্রতিদিন আমাদের অনেক মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়। নতুন নতুন অনেক সম্পর্ক তৈরি হয়। আর সেসব সম্পর্কই আমাদের অজান্তে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়। সময় আর যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা প্রত্যেকেই এখন ভীষণ ব্যস্ত। নিজের জীবন, নিজের ক্যারিয়ার আর নিজের ভালো থাকার বাইরে অন্যের কথা ভাবার মতো সময় আমাদের হাতে নেই। শুধু তাই নয় চলার পথে যারা আমাদের সঙ্গী, যারা আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যাহায্য করছে তাদের দিকেও ঘুরে তাকানোর মতো অবসর নেই! কিন্তু কথায় বলে জীবনের মতো বড় শিক্ষক আর কেউ নেই!
১. হাতে কলমে শেখা
শিশুমনে কৌতূহল থাকে ব্যাপক শেখারও একটা অদম্য ইচ্ছা থাকে। মনে থাকে হাজারো প্রশ্ন। কেন হয়, কখন হয়, কী করে হয়…এক একটা সময় বড়রাও উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন! কিন্তু অবুঝ মন খুঁজে চলে অনেক কিছু। ছোট বয়সে মনের কোনও আঘাত দগদগে হয়ে থাকে সারাটা জীবন! এমন কিছু অভিজ্ঞতা হয়, যা হয়তো সারা জীবনের রসদ। চেষ্টা করলেও ভুলে যাওয়া যায় না। চারাগাছ যেভাবে সার, পানি পেয়ে আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠে, জীবনও ঠিক একইরকম। সময় আর অভিজ্ঞতা জীবনকে অব্যাহতভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। ছোটবেলায় যে কাজে বারণ করা হয় সেই কাজের উপরই থাকে চরম আকর্ষণ। জীবনে নানা ক্ষেত্রে আমাদের ভুল হয়। কিন্তু সেই ভুলই পরবর্তীতে শিক্ষকের মতো কাজ করে!
২. সবার থেকে কিছু না কিছু শিখি
সমাজে সবাই নানাভাবে একে-অপরের থেকে উপকৃত হয়। সবার থেকেই কিছু না কিছু শেখার থাকে। পরিবার, প্রতিবেশী, গাছপালা, পশুপাখি, শিক্ষক, ড্রাইভার, গৃহকর্মী, দোকানদার, চিকিৎসক-তালিকাটা বেশ লম্বা। প্রতিদিন আমাদের অনেক মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়, অনেক নতুন সম্পর্ক তৈরি হয় আর সেই সব সম্পর্কই আমাদের অজান্তে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়। অন্যের ভালো-খারাপ দুটোই আমরা দেখি। বোধ-বুদ্ধি অনুসারে বিবেচনার দায় কিন্তু আমাদের। সমাজের প্রতি প্রতিটা মানুষ দায়বদ্ধ। একে অপরকে উৎসাহ দেওয়া, একে অন্যের অনুপ্রেরণা হয়ে কাটিয়ে দেওয়ার নামই হলো জীবন। অন্যের কথা শোনাটাও কিন্তু একটা শিক্ষা। টেলিভিশন, সিরিয়াল, সিনেমা, রিয়্যালিটি শো, পার্কে খেলা, বাড়ির পোষ্য, ছবি তোলা, হাউস পার্টি, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া সবাই আমাদের শিক্ষক। পরিস্থিতি আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ দেয়, আর সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেয় জীবন।
৩. পরিস্থিতি সবচেয়ে বড় শিক্ষক
জীবনটাই একটা মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। কখন কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে তা কেউই জানে না। বরং সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে শেখায়। জীবনের পারিপার্শ্বিকতা আমাদের নিজেদের সম্পর্কে অনেক কথা জানান দেয়। বুঝিয়ে দেয় আমাদের আসল বাস্তবকে। বরং ঘুরিয়ে প্রশ্ন করতে শেখায়, আমি কে, কী আমার অস্তিত্ব। কখনও তার সোজা উত্তর পাওয়া যায়, কখনও না। নিজেদের ক্ষমতা, নিজের আত্মবিশ্বাস,নিজের ইতিবাচকতা, নিজের প্রতিভা এই সব কিছুর উত্তর দেয় সময় এবং জীবন।
৪. মনের কথা থেকে শিক্ষা
মন আমাদের অনেক কথা শোনে। অনেক কথা বোঝে। কোন পরিস্থিতিতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, সেটাও কিন্তু ভেতর থেকে আমাদের মনই জানান দেয়। কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে; কী করলে সমস্যার সমাধান হবে; সর্বোপরি মানসিকভাবে আমাদের আগলে রাখে জীবন; আর জীবনলব্ধ এসবই হলো বিস্তর অভিজ্ঞতা। জীবন আমাদের অনেককিছু ভরে দিয়েছে,প্রতি মুহূর্তে শিখিয়ে চলেছে। সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার আরেক নাম হল জীবন।
৫. চলমান জীবন থেকে আরও কিছু শিক্ষা
ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই। প্রতি মুহূর্তে একটি একটি করে সেকেন্ড হারিয়ে যাচ্ছে। সেকেন্ড ধরে জীবনকে যথাযথ পরিচালিত করতে পারলেই সাফল্যের শীর্ষে পা রাখা যায়। জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের গল্প প্রত্যেক মানুষের আলাদা। গল্পের রকমফের আলাদা হলেও, সবার জীবনই কিন্তু এগিয়ে চলছে। কেউ ধীরে আবার কেউবা দ্রুত সামনে এগোনোর প্রচেষ্টা চালায়। তাই জীবন থেকেও কিছু বাস্তবশিক্ষা নেওয়া যেতেই পারে
তাই শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি আধুনিক বিশ্বে সাফল্যের চাবিকাঠি। এটি একটি ভাল চাকরি এবং একটি ভাল জীবনের চাবিকাঠি। এটি একটি ভাল ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। শিক্ষা আমাদের একটি ভাল চাকরি পেতে এবং একটি ভাল জীবনযাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা দেয়। এটি আমাদের চারপাশের বিশ্বকে বুঝতে এবং আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সেরা পছন্দ করতে সাহায্য করে।
বুদ্ধিমত্তা এবং চরিত্র- এটাই প্রকৃত শিক্ষার লক্ষ্য।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র.
শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। একজন শিক্ষিত মানুষই পারে একটি একটি সভ্য সমাজ, সভ্য মানুষ এবং পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখাতে। শিক্ষা একটি ভাল ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।