যোগ ব্যায়াম এর উপকারিতা পেতে হলে এর নিয়ম সংযম সম্পর্কে জানতে হবে। যোগ ব্যায়াম শরীর, মন এবং আত্মার তৃপ্তি বয়ে আনে। উত্তেজনা কমাতে এবং শক্তি থেকে চাপ এবং মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে, কীভাবে যোগ ব্যায়াম আপনার দৈনিক তালিকায় রাখবেন সে সম্পর্কে জানুন। যোগ ব্যায়াম স্বাস্থ্যকর জীবন এবং সুখী জীবন কাটাতে সাহায্য করবে।
যোগাসন হল চরম অনুশীলন। এটি একই সাথে আমাদের অভ্যন্তরীণ আলোকে উদ্দীপিত করে এবং আমাদের অতিরিক্ত সক্রিয় মনকে শান্ত করে। এটি শক্তি এবং বিশ্রাম উভয়ই।
এলিস জোয়ান
যোগ ব্যায়াম এর প্রথম সুফল হলে এটি স্বাস্থ্যকর লাইফ লিড করতে সুবিধা প্রদান করে যেমন পেশি শক্তি বৃদ্ধি, শরীরের ভারসাম্য এবং শক্তি বৃদ্ধি করে যা আপনার কাজের প্রতি ফোকাস এবং কাজের সময় বৃদ্ধি করে। নিয়মিত যোগ ব্যায়াম অনুশীলনের ফলে বাত বা অস্টিওপরোসিস এর মতো বয়স সম্পর্কিত অসুস্থতা কমাতে সাহায্য করবে। তাছাড়ও চলাফেরায় সাচ্ছন্দ্য, মেরুদন্ডকে শক্তিশালী এবং দৈনন্দিন কামকর্মে মনোযোগ ফিরে আসে।
যোগ ব্যায়াম এর দ্বিতীয় সুবিধাটি ক্লাস চলাকালীন নিযুক্ত বিভিন্ন শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশলগুলির মাধ্যমে একজনের মানসিক অবস্থার উন্নতির সাথে সম্পর্কিত যা একই সাথে মনকে শান্ত করার সাথে সাথে শরীরকে শিথিল করতে সহায়তা করে; দৈনন্দিন জীবনের ক্রিয়াকলাপ জুড়ে বৃহত্তর স্পষ্টতা এবং ফোকাসের দিকে নিয়ে যায়। এই ধরনের ধ্যানমূলক অনুশীলনগুলি নিজের মধ্যে শান্তি ও প্রশান্তি প্রদান করে উদ্বেগ এবং হতাশার লক্ষণগুলি পরিচালনা করতে সহায়তা করে যাতে ব্যক্তি কেবল নিজের সাথেই নয়, তার চারপাশের বিশ্বের সাথেও আধ্যাত্মিকভাবে সংযুক্ত বোধ করে।
সবশেষে, যোগিক আচার-অনুষ্ঠানে নিয়মিত জড়িত থাকার ফলে ব্যক্তিগত উন্নতির দিকে তাদের নিজস্ব পথ ধরে ব্যক্তিগত অগ্রগতিতে সহায়তা করার সম্ভাবনা রয়েছে; চাপের পরিস্থিতির মধ্যে কীভাবে আরও ভালভাবে মোকাবিলা করা যায় তা শেখা হোক বা প্রকৃতপক্ষে তারা কারা রয়েছে তার অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করা – এই সমস্ত অভিজ্ঞতাগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে যখন এটি অস্তিত্বের পিছনে গভীর অর্থ আবিষ্কার করে শেষ পর্যন্ত অনুশীলনকারীকে ঈশ্বর/মহাবিশ্ব/উত্স এর কাছাকাছি যাকে আপনি এটিকে ডাকুন! এই সমস্ত দিকগুলি মিলিত হয়ে যোগব্যায়ামকে একটি অমূল্য হাতিয়ার করে তোলে যে কেউ তাদের সামনের জীবনযাত্রা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করে!
যোগ ব্যায়াম অভ্যাসের উদ্দেশ্য
সাধারণত যোগ ব্যায়াম অভ্যাসের উদ্দেশ্য হলো শরীরকে সুস্থ রাখা, অসুস্থ শরীরকে রোগ থেকে রেহাই দেওয়া। এই নিবন্ধে প্রদত্ত যোগ ব্যায়াম এর মূল উদ্দেশ্য হলো শরীরকে সুস্থ রাখা এবং রোগা শরীরকে রোগমুক্ত করা।
যোগ ব্যায়াম করার পদ্ধতি
ধ্যানাসন
ধ্যানাসনগুলি অভ্যাসে প্রধানতঃ- ধ্যান, ধারণা, সমাধি প্রভৃতি যৌগিক প্রক্রিয়াগুলি সহজে আয়ত্ত করতে পারা যায়-এমনকি দীর্ঘকাল ধরে অভ্যাস করলেও উপকার ছাড়া কোন অপকার হবার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু ধ্যানাসন ছাড়া অন্য কোন আসন বা মুদ্রা গৃহীর পক্ষে এককালে পাঁচ মিনিটের বেশি অভ্যাস করা উচিত নয়।
ধ্যানাসন অভ্যাসকালে স্বাভাবিকভাবে দম নিতে ও ছাড়তে হয়। প্রতি আসন অভ্যাসের পর শবাসন অবশ্য করণী।
নিম্নলিখিত আসনগুলি ধ্যানাসনের অন্তর্গত-
পদ্মাসন
এই আসন অভ্যাসকালে পা দুটিকে এমনভাবে একটির ওপর অপরটিকে স্থাপন করতে হয়, যাতে পায়ের অবস্থান পদ্মের পাপড়ির মত দেখায়- মনে হয়, এই জন্যই এই আসনকে পদ্মাসন বলে। এই আসন নয় রকম- (১) মুক্ত পদ্মাসন, (২) বীরাসন, (৩) উত্থিত পদ্মাসন, (৪) বকাসন, (৫) বদ্ধ পদ্মাসন, (৬) কুক্কুটাসন, (৭) অর্ধবদ্ধ পদ্মাসন, (৮) সিদ্ধাসন ও (৯) পর্বতাসন।
(১) পদ্মাসন বা মুক্ত পদ্মাসন
প্রণালী- পা দুটি সামনে ছড়িয়ে সোজা হয়ে বস।
এইবার ডান পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে বাঁ জানুর ওপর ৬ নং ছবির মত রাখ-যাতে ডান পায়ের গোড়ালি তলপেটে বাঁ দিকের মূলাধার (লিঙ্গমূলের কিঞ্চিৎ উপরে অবস্থিত) স্পর্শ করে। এখন বাঁ পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে ডান পায়ের উপর এমনভাবে রাখ যাতে বাঁ পায়ের গোড়ালি ডান দিকের মূলাধার স্পর্শ করে। এই অবস্থায় যাতে হাঁটু ভূমি থেকে উঠে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখ। এই আসনে অবস্থানকালে শির, গ্রীবা ও মেরুদন্ড সোজা ও সরলভাবে থাকবে। হাত দুটি ৬ নং ছবির মত কোলের উপর রাখলে ভাল হয়। পদ-দ্বয়ের এইরুপ অবস্থানের সঙ্গে পদ্মের সাদৃশ্য আছে-তাই মনে হয় এই আসনটির নাম পদ্মাসন।
এই অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড থাকবার পর পা ছড়িয়ে দাও এবং পা পরিবর্তন করে অর্থাৎ প্রথমে বাঁ পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে ঠিক আগের মত পদ্মাসন অভ্যাস কর। এই আসন প্রথমে ৩০ সেকেন্ড করে ৪ বার অভ্যাস করতে হবে। এই আসন প্রতিবিার অভ্যাসের পর পা ছড়িয়ে ১৫ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে।
উপকারিতা-এই আসন অভ্যাসে পায়ের বাত ইত্যাদি দূর হয়। পদ্মাসন একটি শারীরিক অবস্থান, যাতে মেরুদন্ড বক্র হয় না। মেরুদন্ডের কর্মক্ষমতার উপরই আমাদের যৌবন ও স্বাস্থ্য নির্ভর করে। আমরা একে যত অবক্র ও নমনীয় রাখতে পারব, দেহাভ্যন্তরের যন্ত্রগুলি তত ভালভাবে কাজ করবার দরুন আমাদের যৌবন তত অটুট থাকবে। কাজেই যাদের বসে কাজকর্ম করতে হয় (যেমন ছাত্র, কেরানী ইত্যাদি) তাদের সমস্ত দিনের মধ্যে অবসর সময়ে অন্ততঃপ্রতিবারে ২ বার করে ৪ বার এই আসন অভ্যাস করা বিশেষ ফলপ্রদ।
ধ্যান-ধারণা অভ্যাসে এই আসন অপরিহার্য। এই আসন অভ্যাসে একাগ্রতা বাড়ে-দীর্ঘজীবন লাভ করা যায়।
(২) বীরাসন ও সুখাসন
মোটা লোকদের বা যাদের বয়স ৪০ অতিক্রম করেছে তাদের পক্ষে পদ্মাসন অভ্যাস করা অনেক সময় কষ্টকর। তাদের সুবিধার জন্যে বীরাসনের ব্যবস্থা। কোন কোন গ্রন্থে বীরাসনকে সুখাসন নামে অভিহিত করা হয়েছে।
প্রণালী-পদ্মাসনের মত প্রথমে বাঁ পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে ডান জানুর উপর রাখ-যাতে বাঁ পায়ের গোড়ালি তলপেটের ডান দিকের মূলাধার স্পর্শ করে। এখন ডান পা হাঁটুর কাছে ভেঙে বাঁ পা-র নিচে রেখে ৭নং ছবির মত সোজা হয়ে বস। পদ্মাসনের মতই এই আসন অভ্যস করতে হয়।
উপকারিতা-এই আসন অভ্যাসে পদ্মাসনের মতই ফললাভ হয়।
(৩) উত্থিত পদ্মাসন
প্রণালীঃ পদ্মাসন এর ছবির মত মুক্ত পদ্মাসনে বস। এইবার দুহাত ৮ নং ছবির মত জানুর দুপাশে সতরঞ্চির উপর রাখ। এখন দম নিতে নিতে দু’হাতের চেটোর উপর দেহের ওজন রেখে তাহের জোরে ৮ নং ছবির মত মুক্ত পদ্মাসনে অবস্থিত দেহ যতদূর সম্ভব উপরে তোল ও দম ছাড়। এই অবস্থায় দম স্বাভাবিকভাবে নিতে নিতে ও ছাড়তে ছাড়তে ১০/২০ সেকেন্ড থাক। পরে দম ছাড়তে ছাড়তে পা ছড়িয়ে সাধারণভাবে বসে ৫/১০ সেকেন্ড বিশ্রামের মত এই আসন অভ্যাস কর। এই আসন মুক্ত পদ্মাসনের মত পরিবর্তন ক’রে পর পর ৪ বার অভ্যাস করতে হয়।
উপকারিতাঃ এই আসন অভ্যাসে পদ্মাসনের সমস্ত উপকার লাভ হয়। তাছাড়া পেটের মেদ কমায়, ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, পেট হাত ও কাঁধের মাংসপেশীকে সবল ও অধিক কর্মক্ষম করে। কাঁধের পেশীর অসমতা থাকলে এই আসন তাও দূর হয়।
৮/১০ বৎসর বয়সের ছেলে-মেয়েদের এই আসন বিশেষ প্রয়োজন।
(৪) বকাসন
প্রণালীঃ পদ্মাসন এর ছবির মত পদ্মাসনে বস। এইবার এই ছবির মত দু’হাতের তালু সামনে রাখ। এখন দম নিতে নিতে দু’হাতের তালুর ওপর দেহের ওজন রেখে হাতের জোরে পদ্মাসন এর ছবির মত পদ্মাসনে অবস্থিত দেহ যতদূর সম্ভব উপরে তুলে এই ছবির মত দু’হাতের ওপর রাখ ও দম ছাড়। এই অবস্থায় মাথা উপরে তুলে রাখতে হবে। এই সময় দম স্বাভাবিকভাবে নিতে নিতে ছাড়তে ছাড়তে ২০/৩০ সেকেন্ড থাক। পরে দম ছাড়তে ছাড়তে পদ্মাসনে অবস্থিত দেহ হাতের ওপর থেকে নামিয়ে পা ছড়িয়ে বসে ৫/১০ সেকেন্ড বিশ্রাম গ্রহণের পর আবার পর বদল ক’রে ৪ বার অভ্যাস করতে হয়।
দ্বিতীয় প্রণালী
প্রণালীঃ প্রথমে হাঁটু মুড়ে দু’পায়ের পরতার উপর বস-পাছা যেন মাটিতে লেগে না থাকে। এবার দু’হাতের তালু মাটিতে রেখে পায়ের আঙ্গলের উপর শরীরের ওজন রেখে বস। দু’পায়ের বুড়ো আঙ্গুল এবং গোড়ালি জোড়া থাকবে। এই অবস্থায় উপরের হাতরে পিছনের পেশীর (ট্রাইসেপ) ওপর ভর দিয়ে হঁটু যতদূর সম্ভব পিঠের উপর দিকে নিয়ে যাও-এই অবস্থায় লক্ষ্য রাখতে হবে দু’পায়ের পাতা যেন জোড়া থাকে।
এইবার দেখানো ছবির মত হাতরে জোরে শরীর মাটি থেকে যতটা সম্ভব উপরের দিকে তোল। এই অবস্থায় ঘাড় তুলে মেরুদন্ড সোজা রেখে দৃষ্টি সামনের দিকে রাখ। গোড়ালি পাছার সঙ্গে লেগে থাকেবে এবং পায়ের আঙ্গুল নীচের দিকে রেখে লক্ষ্য রাখতৈ হবে যেন পায়ের পাতা এবং পায়ের আঙ্গুলি মাটি স্পর্শ না করে। এই অবস্থানে আসনকারীকে উড়ন্ত বকের মত দেখায়।
উপকারিতাঃ এই আসন অভ্যাসে হাত, কাঁধ এবং পেটের মাংসপেশীর ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। হজমশক্তি বৃদ্ধি হয় এবং মেরুদন্ড নমনীয় করে।
(৫) বদ্ধ পদ্মাসন
প্রণালীঃ বকাসন এর ছবির মত পদ্মাসনে বসে ডান হাত পিঠের উপর দিয়ে এনে ডান পায়ের আঙ্গুল ধর এবং বাঁ হাত ঠিক আগের মত পিঠের উপর দিয়ে এবং বাঁ পায়ের আঙ্গুল ধরে এই ছবির আকার ধারণ কর।
এই আসন অভ্যাসকালে চিবুক কণ্ঠকূপে নিবন্ধ রেখে নাসাগ্রে দৃষ্টি স্থাপন করতে হয়। এই আসন অভ্যাসকালে নাসাগ্রে দৃষ্টি স্থাপন করলে যদি অভ্যাসকারী মাথায় একটু যন্ত্রণা বা অস্বস্তি বোধ করে, তাহলে নাসাগ্রে দৃষ্টি স্থাপন না করে ভ্রু মধ্যে বা হৃদয়ে দৃষ্টি স্থাপন করতে পারে। এই অবস্থায় ২০/৩০ সেকেন্ড থাক। এই আসন মুক্ত পদ্মাসনের মত পা পরিবর্তন ক’রে ৪ বার অভ্যাস করতে হয়।
উপকারিতাঃ এই আসন অভ্যাসে বাতজনিত রোগ দূর হয়-বক্র মেরুদন্ড সরল হয়। এছাড়া এই আসন ছোট বড় কাঁধকে সমান করতে উুঁ কণ্ঠার হাড়কে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে সাহায্য করে।
(৬) কুক্কুটাসন
প্রণালীঃ বকাসন এর ছবির মত পদ্মাসনে বস। এইবার দুই জানুর মধ্যে দু’হাত ঢুকিয়ে দু’হাতের বিস্তৃত তালু দুটি মাটিতে রেখে দু’হাতের উপর সম্পূর্ণ ভর দিয়ে দম নিতে নিতে পদ্মাসনে অবস্থিত দেহ ১২ নং ছবির মত শূন্যে তোল। এই অবস্থায় সামর্থ্য মত ১০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত থাকতে পার। প্রথম অভ্যাসকারী এই অবস্থায় থাকাকালীন দম বন্ধ করে থাকতে পারে কিন্তু পরে স্বাভাবিকভাবে দম নিতে ও ছাড়তে চেষ্টা করা উচিত।
এই আসন মুক্ত পদ্মাসনের মত পা পরিবর্তন ক’রে ৪ বার অভ্যাস কর।
এই আসনে অবস্থিত ব্যক্তিকে কুক্কুট বা মুরগির মত দেখায়, তাই এই আসনের নাম কুক্কুটাসন।
উপকারিতাঃ এই আসন স্বপ্নদোষ বন্ধ করে এবং দুর্বল পরিপাক যন্ত্রকে সবল করে। ইহা নিয়মিত অভ্যাসে সুষুম্না রুদ্ধ দ্বার মুক্ত হওয়াতে উভয় নাসিকায় সমানভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস হয়। এছাড়া এই আসন অভ্যাস করলে হাতের বিশেষ করে কব্জির জোর বাড়ে এবং ছোট কাঁধের সমতা আসে।
(৭) অর্ধবদ্ধ পদ্মাসন
এ আসন-পদ্ধতিতে এক পা অন্য পায়ের উপর স্থাপন করে বদ্ধ-পদ্মাসনের নিয়মে হাত পেছন দিক থেকে ঘুরিয়ে এনে উপরে রাখা পায়ের বুড়ো আঙুলকে এই হাত দিয়ে ধরতে হবে। তবে অন্য পা সামনে সোজা রেখে আরেক হাত দিয়ে সরাসরি বুড়ো আঙুল ধরবে।
অথবা মুক্ত-পদ্মাসনে বসে বদ্ধ-পদ্মাসনের নিয়মে এক হাত পেছন দিক দিয়ে ঘুরিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুল ধরলেও অন্য হাত স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে।
উপকারিতা:
যোগশাস্ত্র মতে আসনটিতে সর্বরোগ দূর হয়। হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে হাঁপানি রোগ হতে পারে না, আর থাকলেও অল্পদিনে সেরে যায়। মেরুদণ্ড সোজা ও সরল রাখে। চিন্তাশক্তি, স্মৃতিশক্তি ও ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি করে এবং মনের একাগ্রতা আনে। পায়ের পেশী ও স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে। দেহে বাত বা সায়টিকা আক্রমণ করতে পারে না।
(৮) সিদ্ধাসন
যোগশাস্ত্রে বর্ণিত আসন বিশেষ। পরিবৃত্ত শব্দের অনেকগুলো অর্থের একটি হলো―ঘূর্ণিত। সিদ্ধিলাভের ভাবগত অর্থ থেকে এই আসনের নামকরণ করা হয়েছে সিদ্ধাসন (সিদ্ধ + আসন)। এই আসনের বর্ধিত প্রকরণটি পরিবৃত্ত সিদ্ধাসন নামে পরিচিত।
উপকারিতা
- যৌনাঙ্গ সবল ও সুস্থ থাকে।
- হাঁটু ও গোড়ালি শক্ত হয়।
- কোমর ও পেটে প্রচুর রক্তসঞ্চালন হয়। ফলে এই অংশের মাংশপেশী ও স্নায়ু সবল হয়।
- মেরুদণ্ডের নিম্নভাগ সতেজ ও নমনীয় হয়।
(৯) পর্বতাসন
হাঁটু ভাঁজ করে ম্যাটের ওপর বসুন। দুই হাত কাঁধের সোজাসুজি সামনে রাখুন, দেখবেন কনুই যেন ভাঁজ না হয়।
এবার হাতে ও নিতম্বের সোজাসুজি হাঁটুতে ভর দিয়ে হামাগুড়ি দেওয়ার ভঙ্গি করুন। এই অবস্থানে দেখতে লাগবে অনেকটা টেবিলের আকৃতির। এটিই হলো আসন শুরুর ভঙ্গি।
এবার পায়ের পাতা ও হাতের তালুতে ভর দিয়ে নিতম্ব যতটা সম্ভব ওপরের দিকে তুলতে হবে। শরীরের সম্পূর্ণ ভার থাকবে হাতের তালু ও পায়ের পাতার ওপর।
এবার ধীরে ধীরে মাথা নিচু করুন এবং নিতম্ব আরো ওপরে তুলুন। সুবিধামতো হাত ও পায়ের অবস্থান ঠিক করে নিন। খেয়াল রাখবেন, হাঁটু যেন ভাঁজ না হয় এবং হাত সোজা থাকে। অবশেষে ইংরেজি ‘এ’ আকৃতির মতো শরীরের বিভঙ্গ হলে বুঝবেন আসনের অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছেছেন। এই অবস্থানে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। ১০-২০ বার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে নিতে এই অবস্থান ধরে রাখুন। এই অবস্থানে সারা শরীরে টান অনুভব করবেন।
এবার ধীরে ধীরে হাঁটু মাটিতে নামিয়ে শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন। তিন থেকে পাঁচবার পর্বতাসন অভ্যাস করতে পারলে ভালো হয়।
উপকারিতা
পর্বতাসন অভ্যাস করলে পা থেকে মাথা পর্যন্ত সারা শরীরের পেশি ও অস্থিসন্ধি প্রসারিত হয় বলে ক্লান্তি ও জড়তা দূর হয়। সারা শরীর টানটান হয় ও ঝরঝরে লাগে। আসনটি অভ্যাস করার সময় মেরুদণ্ডের সংলগ্ন স্নায়ুতে রক্ত চলাচল বাড়ে, ফলে ক্লান্তি কেটে যায় ও চনমনে বোধ হয়। কাঁধের পেশি সচরাচর বেশি ব্যবহার করা হয় না বলে পেশি শক্ত হয়ে ব্যথা হতে পারে। সেই সমস্যা চলে যায়। মাথা নিচু করে আসনটি অভ্যাস করা হয় বলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ে। ফলে দুশ্চিন্তা দূর হয় ও মন ভালো থাকে।
সুস্থ্য সবল জীবন যাপনের জন্য যোগ ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।